ইহুদি ও খ্রিস্ট ধর্মে ছয়দিনের সৃস্টিতত্ব।

ইহুদি ও খ্রিস্ট ধর্মে ছয়দিনের সৃস্টিতত্ব। The Six-Day Creation in Judaism and Christianity
ছবি সংগৃহিত

সৃস্টিতত্ব

আদিপুস্তক ১ 
  1. শুরুতে, ঈশ্বর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন। প্রথমে পৃথিবী সম্পূর্ণ শূন্য ছিল; পৃথিবীতে কিছুই ছিল না।
  2. অন্ধকারে আবৃত ছিল জলরাশি আর ঈশ্বরের আত্মা সেই জলরাশির উপর দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছিল।
  3. > সেই জলরাশি কোথায় ছিল? কিসের ওপর?
  4. তারপর ঈশ্বর বললেন, “আলো ফুটুক!” তখনই আলো ফুটতে শুরু করল।
  5. আলো দেখে ঈশ্বর বুঝলেন, আলো ভাল। তখন ঈশ্বর অন্ধকার থেকে আলোকে পৃথক করলেন।
  6. ঈশ্বর আলোর নাম দিলেন, “দিন” এবং অন্ধকারের নাম দিলেন “রাত্রি।” সন্ধ্যা হল এবং সেখানে সকাল হল। এই হল প্রথম দিন।
  7. > খেয়াল করে দেখুন, সূর্য তৈরির আগেই ঈশ্বর দিন সৃষ্টি করে ফেলেছেন।
  8. তারপর ঈশ্বর বললেন, “জলকে দুভাগ করবার জন্য আকাশমণ্ডলের ব্যবস্থা হোক।”
  9. তাই ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের সৃষ্টি করে জলকে পৃথক করলেন। এক ভাগ জল আকাশমণ্ডলের উপরে আর অন্য ভাগ জল আকাশমণ্ডলের নীচে থাকল।
  10. ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের নাম দিলেন “আকাশ।” সন্ধ্যা হল আর তারপর সকাল হল। এটা হল দ্বিতীয় দিন।

bible-1
  1. তারপর ঈশ্বর বললেন, “আকাশের নীচের জল এক জায়গায় জমা হোক যাতে শুকনো ডাঙা দেখা যায়।” এবং তা-ই হল।
  2. ঈশ্বর শুকনো জমির নাম দিলেন, “পৃথিবী” এবং এক জায়গায় জমা জলের নাম দিলেন, “মহাসাগর।” ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে।
  3. তখন ঈশ্বর বললেন, “পৃথিবীতে ঘাস হোক, শস্যদায়ী গাছ ও ফলের গাছপালা হোক। ফলের গাছগুলিতে ফল আর ফলের ভেতরে বীজ হোক। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করুক। এইসব গাছপালা পৃথিবীতে বেড়ে উঠুক।” আর তাই-ই হল।
  4. পৃথিবীতে ঘাস আর শস্যদায়ী উদ্ভিদ উত্পন্ন হল। আবার ফলদাযী গাছপালাও হল, ফলের ভেতরে বীজ হল। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে।
  5. সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে হল তৃতীয় দিন।
  6. তারপর ঈশ্বর বললেন, “আকাশে আলো ফুটুক। এই আলো দিন থেকে রাত্রিকে পৃথক করবে। এই আলোগুলি বিশেষ সভাশুরু করার বিশেষ বিশেষ সংকেত হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আর দিন ও বছর বোঝাবার জন্য এই আলোগুলি ব্যবহৃত হবে।
  7. পৃথিবীতে আলো দেওয়ার জন্য এই আলোগুলি আকাশে থাকবে।” এবং তা-ই হল।
  8. তখন ঈশ্বর দুটি মহাজ্যোতি বানালেন। ঈশ্বর বড়টি বানালেন দিনের বেলা রাজত্ব করার জন্য আর ছোটটি বানালেন রাত্রিবেলা রাজত্ব করার জন্য। ঈশ্বর তারকারাজিও সৃষ্টি করলেন।
  9. পৃথিবীকে আলো দেওয়ার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে স্থাপন করলেন।
  10. দিন ও রাত্রিকে কর্তৃত্ত্ব দেবার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে সাজালেন। এই আলোগুলি আলো আর অন্ধকারকে পৃথক করে দিল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে।
  11. সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে চতুর্থ দিন হল।
  12. তারপর ঈশ্বর বললেন, “বহু প্রকার জীবন্ত প্রাণীতে জল পূর্ণ হোক আর পৃথিবীর ওপরে আকাশে ওড়বার জন্য বহু পাখী হোক।”
  13. সুতরাং ঈশ্বর বড় বড় জলজন্তু এবং জলে বিচরণ করবে এমন সমস্ত প্রাণী সৃষ্টি করলেন। অনেক প্রকার সামুদ্রিক জীব রয়েছে এবং সে সবই ঈশ্বরের সৃষ্টি। যত রকম পাখী আকাশে ওড়ে সেইসবও ঈশ্বর বানালেন। এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটি ভাল হয়েছে।
  14. ঈশ্বর এই সমস্ত প্রাণীদের আশীর্বাদ করলেন। ঈশ্বর সামুদ্রিক প্রাণীদের সংখ্যাবৃদ্ধি করে সমুদ্র ভরিয়ে তুলতে বললেন। ঈশ্বর পৃথিবীতে পাখীদের সংখ্যাবৃদ্ধি করতে বললেন।
  15. সন্ধ্যা হয়ে গেল এবং তারপর সকাল হল। এভাবে পঞ্চম দিন কেটে গেল।
  16. তারপর ঈশ্বর বললেন, “নানারকম প্রাণী পৃথিবীতে উত্পন্ন হোক। নানারকম বড় আকারের জন্তু জানোয়ার আর বুকে হেঁটে চলার নানারকম ছোট প্রাণী হোক এবং প্রচুর সংখ্যায় তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি হোক।” তখন য়েমন তিনি বললেন সব কিছু সম্পন্ন হল।
  17. সুতরাং ঈশ্বর সব রকম জন্তু জানোয়ার তেমনভাবে তৈরী করলেন। বন্য জন্তু, পোষ্য জন্তু আর বুকে হাঁটার সবরকমের ছোট ছোট প্রাণী ঈশ্বর বানালেন এবং ঈশ্বর দেখলেন প্রতিটি জিনিসই বেশ ভালো হয়েছে।
  18. তখন ঈশ্বর বললেন, “এখন এস, আমরা মানুষ সৃষ্টি করি। আমাদের আদলে আমরা মানুষ সৃষ্টি করব। মানুষ হবে ঠিক আমাদের মত। তারা সমুদ্রের সমস্ত মাছের ওপরে আর আকাশের সমস্ত পাখীর ওপরে কর্তৃত্ত্ব করবে। তারা পৃথিবীর সমস্ত বড় জানোয়ার আর বুকে হাঁটা সমস্ত ছোট প্রাণীর উপরে কর্তৃত্ত্ব করবে।”
  19. তাই ঈশ্বর নিজের মতোই মানুষ সৃষ্টি করলেন। মানুষ হল তাঁর ছাঁচে গড়া জীব। ঈশ্বর তাদের পুরুষ ও স্ত্রীরূপে সৃষ্টি করলেন।
  20. ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করে বললেন, “তোমাদের বহু সন্তানসন্ততি হোক। মানুষে মানুষে পৃথিবী পরিপূর্ণ করো এবং তোমরা পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণের ভার নাও, সমুদ্রে মাছেদের এবং বাতাসে পাখিদের শাসন করো। মাটির ওপর যা কিছু নড়েচড়ে, যাবতীয় প্রাণীকে তোমরা শাসন করো।”
  21. ঈশ্বর বললেন, “আমি তোমাদের শস্যদায়ী সমস্ত গাছ ও সমস্ত ফলদাযী গাছপালা দিচ্ছি। ঐসব গাছ বীজযুক্ত ফল উত্‌পাদন করে। এই সমস্ত শস্য ও ফল হবে তোমাদের খাদ্য।
  22. এবং জানোয়ারদের সমস্ত সবুজ গাছপালা দিচ্ছি। তাদের খাদ্য হবে সবুজ গাছপালা। পৃথিবীর সমস্ত জন্তু জানোয়ার, আকাশের সমস্ত পাখি এবং মাটির উপরে বুকে হাঁটে য়েসব কীট সবাই ঐ খাদ্য খাবে।” এবং এই সব কিছুই সম্পন্ন হল।
  23. ঈশ্বর যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সেসব কিছু দেখলেন এবং ঈশ্বর দেখলেন সমস্ত সৃষ্টিই খুব ভাল হয়েছে। সন্ধ্যা হল, তারপর সকাল হল। এভাবে ষষ্ঠ দিন হল।

bible-2

বাইবেলে আরো বর্ণিত আছে,
এর পরে আমি দেখলাম, পৃথিবীর চার কোণে চারজম স্বর্গদূত দাঁড়িয়ে পৃথিবীর চার বায়ুর পথরোধ করছেন যেন পৃথিবীতে, সমুদ্রে কিম্বা কোন বৃক্ষের উপর বাতাস বইতে না পারে।
প্রকাশিত বাক্য ৭/১
> এর থেকে স্পষ্টই বোঝা যায়, পৃথিবীর শেষ চার প্রান্তে চারজন স্বর্গদূত আছে। এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যেতে পারে, কিন্তু তা আর নাই করলাম।

ইসলামে ছয়দিনে সৃস্টিতত্ব

বিজ্ঞানময় কেতাব 

আসুন আজকে বাঙলায় বিজ্ঞানময় একটি সুরা পড়ি। আল্লাহ পাক সুরা ফুসসিলাতের আয়াত ৯-১২ (টিকা-১ এ আয়াতের স্ক্রিনশট দেখুন)  তে কী বলেছেন দেখা যাক। তিনি বলেছেন,

বলুন, তোমরা কি সে সত্তাকে অস্বীকার কর যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দু’দিনে এবং তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ স্থীর কর? তিনি তো সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা।

> অর্থাৎ আমরা জানতে পারলাম, আল্লাহ পাক পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দুই দিনে। এখন আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, পৃথিবী সৃষ্টির আগে দিনের হিসেব কীভাবে আসলো? দিনের হিসাবটা কী সেটা আগে জেনে নিই।

পৃথিবীতে সূর্য যখন ওঠে এবং যখন অস্ত যায়, এই সময়টুকুকে আমরা মানুষেরা সময় গণনার একটি ইউনিট হিসেবে ধরে নিয়েছি। একে আমরা দিন বলি। এরপরে আসে রাত। একটি পুরো দিন এবং একটি পুরো রাত মিলে হয় একটি গোটা দিন। মানে হচ্ছে, এক দিন সময়ের একটি একক। সূর্য উঠা থেকে শুরু করে সূর্য অস্ত যাওয়ার পর থেকে পুনরায় সূর্য উঠা পর্যন্ত সময়কে দিন বলা হয়। তাই দিন পুরোপুরিই নির্ভর করে পৃথিবী এবং পৃথিবীর ঘুর্ণনের গতির ওপর। অন্যান্য গ্রহে দিনের হিসেব হবে ভিন্ন, রাতের হিসেবও। অন্য গ্রহে পৃথিবীর হিসেব অনুসারে দিন একরকম নয়। যেমন,

গ্রহগোটা দিনের দৈর্ঘ্য
বুধ১৪০৮ ঘণ্টা
শুক্র৫৮৩২ ঘণ্টা
পৃথিবী২৪ ঘণ্টা
মঙ্গল২৫ ঘণ্টা
বৃহস্পতি১০ ঘণ্টা
শনি১১ ঘণ্টা
প্লুটো১৭ ঘণ্টা
নেপচুন১৬ ঘণ্টা

পৃথিবীর হিসেবে এই একটি দিনকে আমরা আবার ২৪ টি ইউনিটে ভাগ করে এক একটি ইউনিটকে নাম দিয়েছি ঘণ্টা। তাকে আবার ৬০ ভাগ করে নাম দিয়েছি মিনিট। আবার ৭ দিনকে যুক্ত করে বানিয়েছি এক সপ্তাহ। ৩০ দিনকে যুক্ত করে এক মাস। এগুলো সবই আমাদের মানুষের বানানো বোঝার এবং গণনার সুবিধার্থে সময়ের এক একটি ইউনিট। কিন্তু পৃথিবীই সৃষ্টির আগে দিন এলো কোথা থেকে? দিনের হিসেব তখন তো থাকার কথা না।

তিনি পৃথিবীতে উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চার দিনের মধ্যে তাতে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন-পূর্ণ হল জিজ্ঞাসুদের জন্যে।

> অর্থাৎ এর পরের চারদিন তিনি পৃথিবীর খাদ্যের ব্যবস্থা করলেন। মানে সেই সময় তিনি পৃথিবী নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।

অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম।

>অতঃপর মানে হচ্ছে, এরপরে। অর্থাৎ পৃথিবী বানাবার পরে তিনি মন দিলেন আকাশের দিকে। অর্থাৎ হিসেব মতে, পৃথিবীর বয়স হচ্ছে আকাশের চাইতে কমপক্ষে ছয়দিন বেশি। মানে দুইদিন + চারদিন। উল্লেখ্য, আকাশ সেই সময়ে ছিল ধুম্রকুঞ্জ।

অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দু’দিনে সপ্ত আকাশ করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার আদেশ প্রেরণ করলেন। আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা।

অতঃপর মানে হচ্ছে, এরপরে। এরপরে তিনি সাতটি আকাশ বানালেন। কিন্তু এইসব বানাবার সময় আল্লাহ কোথায় ছিলেন? আল্লাহ নিজেই তার উত্তর দিয়েছেনঃ

তিনিই আসমান ও যমীন ছয় দিনে তৈরী করেছেন, তাঁর আরশ ছিল পানির উপরে, তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান যে, তোমাদের মধ্যে কে সবচেয়ে ভাল কাজ করে। আর যদি আপনি তাদেরকে বলেন যে, “নিশ্চয় তোমাদেরকে মৃত্যুর পরে জীবিত ওঠানো হবে, তখন কাফেরেরা অবশ্য বলে এটা তো স্পষ্ট যাদু!”; সুরা হুদঃ ৭ (টিকা-২) 

মানে আমরা বুঝলাম, যেই সময়ে তিনি আসমান এবং জমিন বা পৃথিবী বানাচ্ছিলেন, সেই সময়ে তার আরশটি ছিল পানির ওপর। কিন্তু সেই পানি কোথায় ছিল? কিসের ওপর?

প্রাচীনকালে মানুষ ভাবতো পৃথিবীটা একটা কচ্ছপের ওপর অবস্থিত। নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে তারা ভূমিকম্প সম্পর্কে জানতো। তাই সেটার সাথে মিলিয়ে তারা দাবী করতো কচ্ছপটা নড়াচড়া করলে ভূমিকম্প হয়। যেন ভূমিকম্প হওয়াটাই কচ্ছপের উপর পৃথিবী অবস্থিত হওয়ার একদম বাস্তব প্রমাণ!
কেউ কেউ হয়তো তাদের কথাটি বিশ্বাস করতো না। তখন তারা তাদেরকে পালটা প্রশ্ন করতো, আমার কথা সত্যি না হলে ভূমিকম্প কেন হয়? বা কচ্ছপের ওপর না থাকলে পৃথিবীটা নিচের দিকে পড়ে যাচ্ছে না কেন? যেহেতু এই প্রশ্নের উত্তরও সেই সময়ে মানুষ জানতো না, যে ভূমিকম্প কেন হয় বা পৃথিবীটা নিচের দিকে পরে যাচ্ছে না কেন, তাই তারা কচ্ছপের ওপর পৃথিবীর দাবীকে মেনে নিতো। বা বলা ভাল, জ্ঞানের স্বল্পতার জন্য সেই অজ্ঞানতার ধারণাই সেই সময়ে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যেতো।
কিন্তু একজন বুদ্ধিমান লোক হয়তো তখন প্রথম প্রশ্ন করলো, আচ্ছা, কচ্ছপের ওপর পৃথিবীটা অবস্থিত তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু কচ্ছপটা কিসের ওপর অবস্থিত? তার নিচে কী? সে কেন পড়ে যাচ্ছে না?
তখন যারা এই কচ্ছপের ওপর পৃথিবী, এই ধারণা বিশ্বাস করতো, বা সেই কচ্ছপের নামে ব্যবসা করতো, বা সেই কচ্ছপের পূজা করে কিছু টাকা পয়সা কামাই করতো, তারা হয়তো বলতো, তার নিচে আছে আরেকটা কচ্ছপের। তার নিচে আরেকটা। এভাবে কচ্ছপ- কচ্ছপ-কচ্ছপ-কচ্ছপ-কচ্ছপ। কিন্তু তার নিচে কী? সব চাইতে নিচের কচ্ছপের নিচে কী?
খুব ভয়াবহ প্রশ্ন। একদম ব্লাসফেমাস টাইপের। এরকম প্রশ্নের সামনে তারা একটু বিব্রত হয়ে যেতো। তখন বলা হতো, সেই সবচাইতে নিচের কচ্ছপটাকে নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না। ওটা আদি কচ্ছপের। ওটা কিছুর ওপর অবস্থিত নয়। ওটা এমনি এমনি আকাশে ঝুলে থাকতে পারে। ওটার অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে। ওটাতে বিশ্বাস করতে হবে। ঐ নিচের কচ্ছপের ক্ষমতা না থাকলে, সে এমনিতেই আকাশে ঝুলে না থাকতে পারলে পৃথিবীটা এমনি এমনি আকাশে ঝুলে আছে কীভাবে? যেহেতু এই প্রশ্নের উত্তর নেই, সেহেতু সেই কচ্ছপটিই সত্যি। এখানেও দেখা যাচ্ছে সেই প্রাচীনকালের গল্পের মতই ঘটনা। আল্লাহ বসে ছিলেন পানির ওপর, তাহলে পানিটা কিসের ওপর ছিল? আল্লাহর ওপর?

 

হিন্দু পূরণে সৃস্টিতত্ব

এবারে আসুন, দেখা যাক হিন্দু পুরানে সৃষ্টি সম্পর্কে কী বলা আছে? উল্লেখ্য, নিচের বক্তব্য মুহাম্মদের আবির্ভাবের অনেক আগে থেকেই মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল।

মহাভারতে সৃষ্টিবিস্তারে বলা হয়েছেঃ

প্রথমে কেবল একমাত্র সনাতন ভগবান্ ব্রহ্মা বিদ্যামান ছিলেন। অনন্তর তাঁহার মরীচি, অত্রি,অঙ্গিরা, পুলস্ত্য, পুলহ, ক্রতু ও বশিষ্ঠ এই সাত অগ্নিতুল্য পুত্রের উৎপত্তি হয়।

সমগ্র বিশ্ব এক ঘোরতর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, পরমব্রহ্ম নিজ তেজে সেই অন্ধকার দূর করে জল সৃষ্টি করলেন। সেই জলে সৃষ্টির বীজ নিক্ষেপ করলে একটি অতিকায় সুবর্ণ অণ্ড বা ডিম সৃষ্টি হয়। সেই অণ্ডের মধ্যে পরমব্রহ্ম স্বয়ং প্রবেশ করেন। এরপর অণ্ড দুই ভাগে বিভক্ত হয়। এর একভাগ দ্বারা আকাশ ও অপর ভাগ দ্বারা ভূমণ্ডল তৈরি হয়। এরপর ব্রহ্মা মন থেকে দশজন প্রজাপতি সৃষ্টি করেন। এই প্রজাপতিরাই মানবজাতির আদিপিতা। এই দশজন প্রজাপতি হলেন- অঙ্গিরা, অত্রি, ক্রতু, দক্ষ, নারদ,পুলস্ত্য, পুলহ, বশিষ্ঠ, ভৃগু ও মরীচি। ব্রহ্মার আদেশে এঁরা বিভিন্ন প্রাণী সৃষ্টি করলেন। বাকি একজন অর্থাৎ নারদকে সৃষ্টি রক্ষার ভার দিলেন। কিন্তু ব্রহ্ম-সাধনায় বিঘ্ন হবে বলে নারদ সে ভার গ্রহণ করলেন না। এই কারণে ব্রহ্মা তাঁকে মানুষ ও গন্ধর্বরূপে জন্মগ্রহণ করার অভিশাপ দিলেন।

কী, মিল খুঁজে পাচ্ছেন? উপরে বাইবেলে বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে আরেকবার পড়ে নিন।

অন্যদিকে, আসুন দেখে নিই মহাবিশ্ব সম্পর্কে বিজ্ঞান কী বলছেঃ

Previous Post Next Post